শহিদ রুবেল, উখিয়া:
ওআইসি (অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স) মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ৫৭টি ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি সংস্থা। সংস্থাটি মূলত মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করা থাকে। এককথায় বলা যায় ওআইসি হলো মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কন্ঠস্বর। ওআইসি (অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স) বর্তমান মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। সফরের প্রথম দিনে তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সারা বিশ্বের আলোচিত ঘটনা মিয়ানমারে নির্যাতনের স্বীকার রোহিঙ্গা মুসলিম নারী পুরুষ এবং পূর্ব থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দেখতে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণে আসেন।  ৪ আগস্ট শুক্রবার ১২ টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। ক্যাম্পে ওআইসি মহাসচিব পৌঁছানোর পূর্বেই রোহিঙ্গারা নিজস্ব দাবী দাওয়া সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষমান ছিল।
নিরাপত্তা চাদরে ঘিরে থাকা স্বত্তেও ওআইসি মহাসচিব কয়েকজন রোহিঙ্গা পুরুষের সাথে হাতমিলিয়ে কৌশল বিনিময় করেন। ক্যাম্প ঘরে ওআইসি মহাসচিব দাড়িয়ে থাকা শিশু আসমা (৯), তাহা (১০), ফয়সাল (১২) এর কাছে তাদের শিক্ষার বিষয়ে জানতে চান ওআইসি মহাসচিব। পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওআইসি মহাসচিব একটি ঝুপড়ি ঘরে ঢুকে ছয় মাস পূর্বে মিয়ানমারের চাইলি প্রাং এলাকা থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী মিসফালা (২২) , নাড়ীবিল এলাকা থেকে আসা আনোয়ারা বেগম (২৬) ছফি নুরের (২৫)  সাথে কথা বলেন ।
পরে মায়ানমারে নির্যাতনের স্বীকার  রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সাথে একান্তে বৈঠক করেন।এবং মনোযোগ সহকারে স্বামী হারানো ধর্ষণের স্বীকার জামালিদা , গুলিবিদ্ধ জাকারিয়ার মুখে মিয়ানমারে নির্যাতনের  বর্ণনা শুনেন। এইসময় ওআইসি মহাসচিব  ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিন নিজ থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে তুলে নেওয়ার দৃশ্যে সবাই হতবাক হয়ে যান।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওআইসি মহাসচিব বলেন, ওআইসি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব প্রদান করছে। বাংলাদেশের মত  ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের মুসলিমরাষ্ট্র সমুহকে মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর আহব্বান জানান। এইসময় তিনি ইসলাম ধর্মের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, ইসলাম ধৈর্য্য ধরাণ করার কথা বলে। হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে বলেন।
ওআইসি মহাসচিবের বর্ণিত দৃশ্যে আবেগাপ্লুত হয়ে রোহিঙ্গারা বলেন, ওআইসি মহাসচিবের আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। তিনি রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে তুলে নিয়েছেন। অথচ আমাদের শিশুরাই আজ শিক্ষাবঞ্চিত। তার কাছে একটাই দাবী নাগরিকত্ব দিয়ে যাতে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারে।  এদিকে কিছু কিছু রোহিঙ্গা নারী তাদের পাশে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে বিভিন্ন দেশ এবং সংগঠন থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এলেও ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিনের আন্তরিকতা লক্ষণীয় ছিল বলে মন্তব্য করেন দায়িত্ব পালনরত সংবাদকর্মী ওবাইদুল হক আবু, রফিক মাহমুদ।
এই সময় সফরসঙ্গী হিসেবে আরো ছিলেন ওআইসির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম),আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ওআইসি মহাসচিব বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পরিদর্শনে মুগ্ধ হয়ে সমুদ্র সৈকতকে আল্লাহর অশেষ রহমত বলে মন্তব্য করেন।